ছোট্ট রাফিদের হারিয়ে যাওয়ার গল্প

ছোট্ট রাফিদের হারিয়ে যাওয়ার গল্প

যাত্রী ছাউনিতে বসে আছি।
পরের বাস আসার জন্য।প্রথম টা মিস করেছি তাই এই অবস্থা।অবশ্য মিস করার কারন আছে।যে ভিড় তাতে পরবর্তীটায় যেতে পারি কিনা তাতে সন্দেহ আছে।
.
যাই হোক চেষ্টা করবই ইনশাল্লাহ যাতে পরেরটায় যেতে পারি।বাসস্টান্ডে সকালে নাকি আবার একটা সরক দূর্ঘটনা হয়েছিলো। সেখানে প্রচুর রক্ত ছিলো আর একটা বিস্রি দূর্গন্ধ আসছে। পেটের ভেতরটা যেন মোচর দিয়ে উঠছে।যাই হোক অপেক্ষা চলছে কিন্তু সময় যেন যেতেই চাচ্ছে না। ফোন টা বের করে টিপাটিপি শুরু করলাম। সময় রাত ৯ টা, বাড়ি যাচ্ছি কলেজ বন্ধ তাই। অন্য কিছু মিস হলেও কলেজ বন্ধ থাকলে বাড়ি যাওয়া মিস হয়না।
.
বাস আসবে মনে হয় ২ বা ৩ মিনিট পর। হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম একটি মেয়ের। একটু অবাক হলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে একসময় চোখ পড়লো কয়েকজন লোকের ভিড়ের দিকে। হয়ত সেখান থেকেই আসছে শব্দটা। এগিয়ে গেলাম বিষয় টা দেখার জন্য,,

.
সেখানে গিয়ে আরো একটু বেশি অবাক হলাম। ভয়েস টা মেয়েলি হলেও ছিল একটি ছেলের।গায়ের রঙ ফরসা। চুল গুলো বড় বড়। গায়ে একটা টিশার্ট, একটি হাফ প্যান্ট।,পা খালি। বয়স আনুমানিক ৫ এর মত। যদিও লোক দেখে বয়স বোঝার ক্ষমতা আমার নেই তবুও ইচ্ছেমত হিসেব করে নিলাম। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম ছেলেটি পথ হাড়িয়ে গিয়েছে। বাড়ির পথ জানা নেই। মা বাবা সবই আছে কিন্তু নিজের নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছেনা। ছেলেটির মুখটা দেখে মায়ায় পড়ে গেলাম। কেউ কোন হেল্প করতে পারছে না। একের পর এক প্রশ্ন সবাই জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে আর সেই জন্যই ছেলেটি ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছে।
.
এরই মধ্যে বাস এসে গেল। মাথা না ঘামিয়ে সোজা বাসে গিয়ে বসলাম। কিন্তু কেমন যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করছিলো। মনে হলো বাচ্চাটিকে আমার সাহায্য করা দরকার। কিন্তু সে তো কিছুই জানেনা, ধুর বাদ দিই এসব। কিছুক্ষন পর কি মনে করে উঠে গেলাম সেই যায়গায়। ছেলেটিকে বললাম ভাইয়া আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি তুমি আমার সাথে যাবে?আমার বাসায়? তারপর আমি তোমার ঠিকানা খুজে বেড় করবো। সে কথা বলছিলো না, কেদেই চলছিলো। মনে হল যাবেনা হয়ত বিশ্বাস করতে পারছিলো না। আবার বাসে গিয়ে বসলাম। বাস ছেড়ে দিচ্ছে, হঠাৎ দেখলাম ছেলেটি আমার সামনে। পাশে এসে বসল। সাথে একটি লোক ও ছিলো তিনি বললেন ও আপনাকে দেখিয়ে বলেছে আমি ভাইয়ার সাথে যাব। তিনি বললেন আমরা ওকে যারতার হাতে ছাড়তে পারিনা আপনার পরিচর আর কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে যান। আমি কিছু না মনে করে দিয়ে দিলাম। লোকটি নেমে গেলো আর বাসও ছেড়ে দিল।
.
হাইওয়ে তে বাস চলছে। ছেলেটি দেখতে খুবই কিউট নিজের ভাইয়ের মত লাগছিল। ইস আমার যদি এরকম একটি ভাই থাকতো?
তোমার নাম কি?
-রাফিদ।
-তোমার আব্বু আম্মুর নাম জানো?
-হ্যা
-কি নাম তাদের।
-রাহাত আর শারমিন।
-ও আচ্ছা, তুমি এখানে কিভাবে এলে?
-আম্মু আব্বুর সাথে।
ওর কাছ থেকে যতটুকু ইনফরমেশন জানলাম তাতে বাড়ি তো দূর তবে ওর বিভাগ পর্যন্তও যেতে পারবো না।
.
শেষমেশ বাড়ি পৌছালাম। আম্মু ছেলেটি সম্মন্ধে প্রশ্ন করলে তাকে সব খুলে বলি। ওনাকেও চিন্তিত দেখাচ্ছিল কথা শোনার পর। কিছুই বলল না। ছেলেটি আমাদের সাথেই ভালো থাকছিলো। আমাকে একদিন বলল আমি আমার বাড়ির ঠিকানা জানি। আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম জানো তো ওই লোক গুলোর কাছে বলো নি কেন? আর আমাকেও বা বলোনি কেন? সে বলল ওই লোক গুলোকে দেখে ও ভয় পাচ্ছিলো আর তাই কেদেছিলো। কিন্তু আমার মত ওর একটা চাচাতো ভাই আছে। সে তাকে খুবই ভালোবাসে। আমার সাথে তাই এসেছে। পরের দিন আমি তাকে নিয়ে সেই ঠিকানায় গেলাম। কিন্তু যা দেখলাম সেটা আশা করিনি। বাচ্চাটির মা বাবা তারা আগে এখানে থাকতো কিছুদিন হলো তারা চেইঞ্জ করেছে। কিন্তু বাচ্চাটি সেটা মনে রাখতে পারেনি। বাড়িওয়ালাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন যে বর্তমান ঠিকানা ছেলেটির মা বাবা তাদের দিয়ে যায়নি। পরে গেলাম মহা বিপদে।কোনো উপায় না দেখে চলে এলাম সেখান থেকে।
.
রাফিদ আমার পরিবারের সাথে মিশে আমার পরিবারের একটি অংশ হয়ে গিয়েছিলো। রাফিদকে নিয়ে ফেইসবুকেও অনেক স্টাটাস দিয়েছি। কিন্তু তেমন কোনো সারা পাইনি। এভাবেই চলছিলো। রাফিদ মা বাবার জন্য মন খারাপ করলেও অনেকটাই ভুলে থাকতো। কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন অচেনা আইডি থেকে মেসেজ আসে এবং তিনি নাকি রাফিদ কে চেনেন। আমি তার সাথে মোটামুটি কথা বলে তার এড্রেস নিয়ে একাই চলে গেলাম। আর চিন্তা করছি এর মা,বাবার কি মোটেও চিন্তা করছে না এ কেমন মা,বাবা? যাই হোক গেলাম তার কাছে। লোকটি ছিলো আমার মতই বয়সী একজন ছেলে । তার নাম শাহাদাত। শাহাদাত আমাকে জানালো যে সে নাকি কিছুদিন আগে সেই যায়গায় একটা বাস থেকে নামতে দেখেছে। আর সেখান থেকে নাকি অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলো। ওনার কথায় তেমন কোন হেল্প পেলাম না। অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিলাম হয়ত সে ভালোভাবে চেনে তবে সেটা হলো না।
.
তবে আমি তার কথামতো তাকে নিয়ে সেই যায়গায় গেলাম। আর খোজ নিলাম কি গাড়িতে এসেছিলো আর কোথা থেকে। অবশেষে জানতে পারলাম যে বাস কোথা থেকে এসেছিলো।চলে গেলাম সেইখানে। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে তারিখ বললাম যেদিন আমি বাড়ি এসেছিলাম। তখন দেখালাম ২ সিটের টিকিট কাটা ছিলো নাম গুলোও স্পষ্ট। আর ঠিকানা দেওয়া ছিলো। তাই দেরী না করে ঠিকানায় চলে গেলাম আর দেখাও পেয়ে গেলাম তাদের সাথে কথা বললাম কিন্তু তারা অবাক হলেন আমার কথা শুনে। রাফিদ বেচে আছে তাদের দিশ্বাস হচ্ছিলো না। তবে এই বিষয়ে আমিও অবাক। তারা বিশ্বাস করবে না কেন? যাই হোক তাদের নিয়ে আমার বাসায় আসলাম।
.
রাফিদ কে দেখে তার মা তাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে পড়লো। আর আমি তার বাবার কাছ থেকে জানলাম যেদিন সরক দূর্ঘটনা হয়েছিলো সেদিন রাফিদ ১০ টাকা নিয়েছিলো চকলেট কিনবে। তারা ভেবেছিলো রাফিদ মারা গিয়েছে। রাফিদ সেই সময়ে মেইনরোড পার হচ্ছিলো আর হয়তো দূরে কোথায় গিয়েছিলো। তারা পেছনে ফিরে দূর্ঘটনা দেখতে পায়। তাই তারা আর ওই যায়গার লোকেড়াও এটা ভেবেছিলো ওই সময়ে। আর তারা ওই সময়ে ওই লাশ নিয়ে বাসায় চলে যায়।
তার পর থেকে তার মা অসুস্থ। রাফিদ মাকে ফিরে পেয়ে প্রচন্ড কান্নায় ভেংগে পড়লো। না চাইতে হঠাৎ চোখের কোনে এক ফোটা জল চলে এলো।
.
তবে এটা ভেবে খুশি লাগছে যে রাফিদ কে তার মা বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।
Writer: Mehedi MehranFollow Me

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

অসমাপ্ত গল্প

গল্পঃ সাদা পরী।