অভিমানী মেয়েটি...

এই রিকশা যাবে?
ডাক দিলো মেহেদী। বৃষ্টি হচ্ছে প্রচন্ড তার পরে আবার বাজ পড়ছে।অন্য রকম একটা মূহূর্ত ভালোই লাগছে তার বৃষ্টির মধ্যে রিকশায় চড়তে। কল্পনা বিলাসী একটা সরল ছেলে মেহেদী। মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলে সে । বুকে হাজার স্বপ্ন নিয়ে এসেছে এই ঢাকায়। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে সে আড্ডা দেয় খুব কম। নেশা করে না, কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার করে না। যাই হোক বাসায় পৌছালে ভাড়া দিয়ে ঢুকে পড়ল। 
.
রাতে অচেনা একটা নাম্বার থেকে ফোন আসল রিসিভ করে হ্যালো হ্যালো করছে কিন্তু কোন শব্দ নেই। রাগ হয়ে কেটে দিল সে। ১ সপ্তাহ ধরে ওই নাম্বার থেকে ফোন আসে কিন্তু কেউ কথা বলে না। পরের দিন ক্লাস এ গেল ক্লাস করে ফ্রেন্ড দের সাথে কিছুক্ষন গল্প করার পর বাসায় চলে আসল।
.
আজকে আবার সে নাম্বার থেকে ফোন আসল রিসিভ করেই প্রশ্ন হ্যালো আপনি কি কথা বলতে জানেন না?
হ্যা জানি। (ফিমেইল ভয়েস)
কে আপনি? আর কেনই বা ফোন দেন আর কেনই বা কথা বলেন না? হ্যা?(মেহেদী) 
এক সাথে এত উত্তর দেবো কিভাবে? বলুন
আচ্ছা বলুন কে আপনি?
আমি কে সেটা জেনে আপনি কি করবেন?
কথা বলছি অথচ নাম জানতে চাইব না? আজব!
কেন নাম না বললে কথা বলবেন না?
না বলব না বাই। ফোন টা কেটে দিল মেহেদী।
আবার ফোন আসলো....
হ্যালো আপনার কি সমস্যা?
কিছু না।(মেহেদী)
তাহলে ফোন কাটলেন কেন?
এমনি
কল আমি দিয়েছি আপনি কেটেছেন কেন?
মানে?
মানে টাকা কি আপনার বাবা আমাকে রিচার্জ করে দিয়েছিল? যে কেটে দিলেন?
ভালো লাগছিল না
কি ভালো লাগছিল না?
কথা বলতে।
কেন কেউ আছে নাকি?
কেউ এর মানে কি?
মানে কেউ আছে নাকি কথা বলার?
আবার কেটে দিল মেহেদী কেমন যেন বোর লাগছিলো। তারপরে আবার মেয়েটা মাথাটা গরম করে দিল। গুন্ডার মত কথাবার্তা। মেয়েরা এরকম হয় আগে জানা ছিল না।




মেয়েদের সাথে সে তেমন একটা কথা বলেনা প্রেম তো দূরের কথা। আর প্রেম করবেই বা কেন? প্রেম বলতে যা হয় তা ফ্রেন্ডদের কাছ থেকেই দেখেছে আর প্রেম মানে হল টাইম পাস। কিন্তু তার কাছে প্রেম বলতে অনেক বড় একটা ব্যাপার। যার মূল্য তার কাছে অনেক তাই সে টাইম পাসের জন্য প্রেম করে না। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে সে বলে প্রেম আমার দ্বারা হবে না ভাই।
.
২ দিন হয়ে গেল আবার রাতে ফোন আসল রিসিভ করল...
হ্যালো (মেহেদী)
হ্যালো কেমন আছেন?
আমি কেমন আছি তা দিয়ে আপনার কি দরকার?
দরকার আছে বলেই তো জিজ্ঞেস করছি.
ভালো আছি আপনি কে বলুন তো?
আমি রিমি...
রিমি হল মেহেদীর ২ বছরের জুনিয়র একই কলেজে পড়ে ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। সে মেহেদী কে পছন্দ করে কিন্তু বলতে পারেনা যদি মেহেদী তাকে ফিরিয়ে দেয়? সে সব সহ্য করতে পারবে কিন্তু এটা মেনে নিতে পারবেনা। সে অনেক কষ্ট করে মেহেদীর নাম্বার জোগাড় করেছে।মেহেদী সবার থেকে একটু আলাদা শান্ত একটা ছেলে তাই তাকে সে পছন্দ করে।
মেহেদী রিমির নাম শুনে চমকে গেল। সে কেন তাকে ফোন দেবে আমি তো তাকে এখন পর্যন্ত দেখি ই নি।
শুধু বন্ধুদের কাছে শুনেছিল তার থেকে ২ ইয়ার নিচের ব্যাচের রিমি নামের মেয়েটি সুন্দরী। যেমন সুন্দরী তেমনি ব্যাবহার। যাই হোক রিমির নাম শুনে একটু অবাক ই হল।
কে রিমি??
হ্যা কেন অবাক হচ্ছেন নাকি?
না মানে ইয়ে হ্যা।
অবাক হওয়ার কিছু নেই কি করেন?
তেমন কিছুনা।
কয়েকদিন কথা চলে এভাবে।
মেহেদী বুঝতে পারছেনা রিমি মেয়েটি কেন তাকে ফোন দেয় কেন তার ভালো মন্দ কেয়ার করে। যাই হোক তারা ফোনে কথা বলতে বলতে অনেক ফ্রি হয়ে যায়।
এর কিছুদিন পরেই রিমি ডিসাইট করে আজকে বলেই ফেলবে এবং তাই করল।
.
কিন্তু মেহেদী রাজি হল না। সে তাকে বলল আমি রিলেশন এ জড়াতে চাইনা । রিমি এটা আসা করেনি, যে ভয়টা সে পাচ্ছিল সেটাই হল। সে মেহেদী কে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু ব্যার্থ হয়। রিমি বুঝতে পারছিলো না সে ক হারিয়েছে চোখের কোনে জল এসে যায়।সে আবার মেহেদী কে বলে কিন্তু মেহেদী তাকে আবার ফিরিয়ে দেয়। রিমি হতাশ হয়ে চলে যায়। মেহেদীর কথা ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেমন হুহু করে ওঠে।
.
১ সপ্তাহ হল রিমি নামের মেয়েটি আর তাকে বিরক্ত করে না। তাকে কলেজেও দেখা যায় না। মেহেদী কেমন যেন শুন্যতা অনুভব করে। তার মনে হয় কি যেন একটা হাড়িয়েছে এমন তো আগে কখনও হয়নি। তাহলে আজ কেন হচ্ছে?রিমির সাথে এরকম আচারন করা তার একদম ই উচিত হয়নি। তাই সে রিমির বান্ধবীদের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে চলে যায়। 
.
বাসায় নক করতেই রিমির বাবা দরজা খোলেন আর জিজ্ঞেস করেন তুমি মেহেদী?
জ্বী,কিন্তু আপনি আমার নাম জানেন কিভাবে?
আমার মেয়ে আমাকে সব বলে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। ছোট বেলায় ওর মা মারা যাবার পর থেকে ওকে আমি আদর দিয়ে বড় করে তুলেছি। ওর যাতে আঘাত না লাগে তাই ওর ইচ্ছার বিরূদ্ধে কখনো যাইনি।
তোমার কথায় খুব আঘাত পেয়েছে সারাদিন চুপ করে থাকে কেঁদেছেও খুব। খাওয়া দাওয়া করেনা ঠিকমত।
আসো আমার সাথে।
মেহেদী তার পিছন পিছন গিয়ে রিমির রুমের দরজার সামনে উপস্থিত হল। রিমির বাবা বলল তুমি ভেতরে যাও কথা বল দেখ রাগ ভাংগাতে পারো কি না আমি আসছি....বলে চলে গেলেন তিনি।
.
মেহেদী ভিতরে গিয়ে দেখল শুয়ে আছে রিমি।
মেহেদী কে দেখে অন্যপাশ ফিরল রিমি।মেহেদী কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল ভালোবাসো আমায়?
না, আমি কেন ভালোবাসব আপনাকে?
হুম ভালোবাসবে অনেক....
না বাসিনা।
বাসো
ওকে ঠিক আছে বাসো না।
বাসি
হা হা তুমি তো বললে বাসো না..
আপনাকে না একদমমমমম.....
একদম কি ভালোবাসো?
না 
সত্যি?
হ্যা
ওকে তাহলে আমি চলে যাচ্ছি....
এই মিস্টার মেহেদী কোথায় যান গেলে খুন করে ফেলব
তুমি তো ভালোবাসো না তাই চলে যাচ্ছি...
কে বলেছে বাসিনা অনেক ভালোবাসি...
আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি...
মেহেদীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল রিমি তবে এটা বেদনার কান্না ছিল না এটা ছিল প্রিয় মানুষটিকে সারা জীবনের জন্য পাওয়ার কান্না...

রাইটারঃ Mehedi Mehran    Follow Me

Comments

Popular posts from this blog

অসমাপ্ত গল্প

গল্পঃ সাদা পরী।